Description
কোন জাতি কতটা সমৃদ্ধ তা বোঝা যায় তাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখে। জমিদারদের জমিদারবাড়িগুলোই ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বড় অংশ। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই জমিদারবাড়ি রয়েছে, যেগুলোর একটি অংশ বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত! এসব নিদর্শনের মধ্যে প্রাচীন প্রাসাদোপম জমিদারবাড়ি উল্লেখযোগ্য, পর্যটনের খোরাক! তবুও আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা থেকে কুষ্টিয়ার জমিদার’ গ্রন্থটিতে কুষ্টিয়া জেলার ২২টি জমিদারবাড়ির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। মুঘল সাম্রাজ্যের সময় জোতদার, জমিদাররা আভিজাত্যের প্রতীক ছিল এবং শাসক শ্রেণি গঠন করত। বাঙালি সমাজের রূপান্তর ঘটেছিল বিদেশি স্বার্থে। একশ্রেণির হিন্দু-মুসলমান বাঙালি, শাসকের অনুগত হয়ে বিত্ত সঞ্চয় করে আভিজাত্যের তকমা লাগিয়ে সমাজ-প্রভু হয়ে ওঠে। বিত্তের গদিতে আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে তারা রাজা, রায়বাহাদুর খেতাবে বিভূষিত হতে থাকে। বেশির ভাগ বাঙালি সহায়সম্পদ হারিয়ে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিল। জমিদাররা ইংরেজ শাসনের ভিত পাকাপোক্ত করেছিল- তাদের স্বার্থেই দরিদ্র গ্রামবাসীকে বাস্তুচ্যুত করেছিল, দারিদ্র্যের শেষবিন্দুতে পৌঁছে দিয়েছিল। এই গ্রামবাসীর পনেরো আনাই ছিল কৃষক। পাঠান, মুঘল শাসনব্যবস্থাকে ম্লান করে বিদেশি ইংরেজ শাসকরা তাদের অধিকৃত অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখতে যে শোষণযন্ত্র তৈরি করে, সেক্ষেত্রে জমিদাররা গ্রহণ করেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রাস্তার ধারে গাছ লাগিয়ে, রাস্তা নির্মাণ, ইন্দারা বা কুয়া ও পুকুর কাটিয়ে তথাকথিত গণমঙ্গলের যে উদ্যোগ তারা নিয়েছিল, তার অন্তরালে ছিল তাদের শোষণের নৃশংস মানসিকতা। হিন্দু-মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে যে জমিদার গোষ্ঠীর সৃষ্টি, তাদের নিষ্ঠুরতার যে পরিচয় পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলো দুর্ভিক্ষ। বিদেশি বণিক যখন এ দেশে প্রভু হয়ে বসে, তখন তারা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বাণিজ্যিক স্বার্থে পরিচালিত করে। সেজন্য তাদের প্রয়োজন হয়েছিল জমিদারশ্রেণির মতো এক গোষ্ঠীর। কুষ্টিয়ার সেই অতীত জমিদারের ইতিহাস আলোকপাত করার প্রয়োজন রয়েছে। জমিদারি প্রথা’ প্রবর্তিত হয় ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এর শোষণের হাত অক্টোপাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে আমাদের পল্লীর কুটিরে কুটিরে। জমিদারের অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ সময় ব্রিটিশ-ভারতের নানা স্থানে কৃষক বিদ্রোহ হয়। কোথাও কোথাও উৎপীড়িত কৃষক বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিশোধের স্পৃহায় উদ্দীপিত হয়ে উঠে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ্বে রচিত মীর মর্শারফ হোসেনের জমীদার দর্পণ’-এর কথা আজ অনেকে ভুলে গেলেও এই নাটকে তখনকার যে একটি বেদনাময় চিত্র আঁকা হয়েছে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
Reviews
There are no reviews yet.