Description
স্বাধীনতা পরবর্তী দিনগুলো বাঙালির জন্য সুখকর হয়নি মোটেও। যে লক্ষ্য নিয়ে এদেশের মানুষ বারবার গণতান্ত্রিক লড়াই চালিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, শেষমেশ স্বাধীনতার সে লক্ষ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এর কারণ মূলত: রাজনৈতিক নেতৃত্বের হঠকারিতা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের নেতৃত্বপ্রদানকারী শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে তা অনুসরণে ব্যর্থ হন। ফলে অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় হাতছাড়া হয়েছে বারবার। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের লক্ষ্য স্বপ্নে দেখার মতো করেই দশকের পর দশক অনবরত ঘুরপাক খেয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মননে, চিন্তা ও চেতনায়।
এ দেশের মানুষ কখনোই ভালো ছিল না। সামাজিক বা রাজনৈতিকভাবে তো নয়ই। যুগের পর যুগ দুঃসহ অবস্থায় বাস করে করে একটু একটু করেই তাদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল সেই সুদূর অতীতে। তারা চেয়েছিল নিরাপদ ও অধিকারসম্পন্ন গণতান্ত্রিক একটি দেশ। এটাই ছিল বাঙালি জাতির বহুদিনের স্বপ্ন। কিন্তু তারা ভুলটি করে বসে তাদের পথপ্রদর্শক নির্বাচনে। তাদের ‘প্যাথফাইন্ডাররাই’ তো দেখেনি প্রকৃত স্বাধীনতা বা ভোগ করেনি অধিকার। চর্চাও করেনি নিজস্ব গণ্ডিতে গণতন্ত্রের। অধিকার যে মানুষের জন্মগত দাবি, তা তারা বোঝার চেষ্টাই করেনি। আর সে কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে প্রকৃতির নিয়মে।
আসলে দুর্ভাগা এ দেশ। আর দুর্ভাগা এ দেশের মানুষও। স্বাধীনতার চার যুগ তারা অসহায়ের মতো অবলোকন করেছে দুঃশাসনের পাশাপাশি কুশাসন। অপশাসন আর শোষণে তারা জর্জরিত হতে দেখেছে নিজেদের। তারা দেখেছে গত চার যুগে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের উলঙ্গ আস্ফালন। গণতন্ত্রের আড়ালে তারা দেখেছে স্বৈরতন্ত্র। দেশের মানুষ আজ অবসাদগ্রস্ত, ক্লান্ত। নৈরাজ্যের নিষ্পেষণে আজ দিশাহারা দেশের আপামর মানুষ।
আজকে স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর আশাহীন এ জীবনের কথা বলতে হত না বা লিখতেও হত না। যদি না আমি বা আমরা এখন এমনভাবে অর্থাৎ উদ্ধারহীন, শ্বাসরুদ্ধকর, বদ্ধ অন্ধকারে বাস না করতাম। নিজের দেশে এমনভাবে বাস করছি যেন দণ্ডিত হয়ে আছি সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে। এমন কারাগারে আমি বা আমরা আগে কখনো বাস করিনি- একাত্তরেও না। সেটি ছিল আমাদের মুক্তির বছর। বিদেশি খুনিদের দিয়ে আক্রান্ত থেকেও আমরা মুক্ত ছিলাম। এভাবে আমার বা আমাদের দম আগে কখনো বন্ধ হয়ে আসেনি। কত দুঃখজনক যে, আমরা আজ নিজেরাই পরাধীনভাবে বাস করছি আমাদের নিজ মানুষদেরই নিকৃষ্ট আধিপত্যে।
Reviews
There are no reviews yet.